বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ যেতে চান। বিশেষ করে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে চাকরির জন্য যে ভিসা সবচেয়ে বেশি আলোচিত, সেটি হলো কলিং ভিসা। আজ আমরা সহজভাবে জানব মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা কী, এটি কিভাবে পাওয়া যায়, খরচ কত, এবং কোন কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা

মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা – বিস্তারিত গাইডলাইন

বাংলাদেশের অনেক মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যান। এখানে কারখানা, নির্মাণকাজ, কৃষি এবং সার্ভিস সেক্টরে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি কর্মীদের জন্য বিশেষ ভিসার ব্যবস্থা করেছে, যেটি পরিচিত কলিং ভিসা নামে। এই ভিসার মাধ্যমে বৈধভাবে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ পান।

কলিং ভিসা কী?

কলিং ভিসা হলো মালয়েশিয়া সরকারের একটি বৈধ কর্ম ভিসা ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা সরাসরি বিদেশি কর্মীকে আমন্ত্রণ জানায়। সহজ কথায়, কোনো কোম্পানি যখন বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন বোধ করে, তখন তারা সরকার অনুমোদিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মীকে “কল” করে আনে। তাই একে বলা হয় কলিং ভিসা

কলিং ভিসার জন্য কারা আবেদন করতে পারেন?

  • যাদের বয়স সাধারণত ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে
  • শারীরিকভাবে সুস্থ ও ফিট থাকতে হবে।
  • বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে (অন্তত ২ বছরের মেয়াদসহ)।
  • কোনো ধরনের অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা চলবে না।
  • কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হতে পারে, যেমন টেকনিক্যাল বা সার্ভিস সেক্টরে।

কলিং ভিসা পাওয়ার ধাপসমূহ

১. কোম্পানির অনুমোদন – মালয়েশিয়ার যে কোম্পানি শ্রমিক নিতে চায়, তাদেরকে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় ও ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুমতি নিতে হয়।

২. চুক্তিপত্র – কর্মীর সাথে কোম্পানির চুক্তিপত্র হয়, যেখানে কাজের ধরন, বেতন, সুবিধা ও মেয়াদ উল্লেখ থাকে।

৩. ভিসা অনুমোদন (Calling Visa Approval) – সরকার অনুমোদন দিলে কর্মীর নামে একটি কলিং ভিসা জারি হয়।

4. মেডিকেল টেস্ট – বাংলাদেশে নির্ধারিত মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়।

5. ভিসা স্ট্যাম্পিং – মালয়েশিয়ার দূতাবাসে পাসপোর্টে ভিসা স্ট্যাম্প করা হয়।

6. ট্রাভেল ও জয়েনিং – ভিসা পাওয়ার পর কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়ে নির্ধারিত কোম্পানিতে যোগদান করেন।

মালয়েশিয়ার কলিং ভিসার খরচ বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন হতে পারে। খরচ সাধারণত বহন করে নিয়োগকর্তা বা আংশিকভাবে কর্মী। খরচের মধ্যে থাকে—

  1. ভিসা প্রসেসিং ফি
  2. মেডিকেল টেস্ট খরচ
  3. এজেন্সি চার্জ (যদি থাকে)
  4. টিকেট ও ভ্রমণ ব্যয়

বাংলাদেশ থেকে সাধারণত ২ লক্ষ থেকে ৩.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে সম্পূর্ণ খরচ হতে পারে (এটি সময় ও কোম্পানির উপর নির্ভরশীল)।

কলিং ভিসার ক্ষেত্রে সতর্কতা

  • অবশ্যই সরকার অনুমোদিত এজেন্সি বা রিক্রুটিং এজেন্টের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।
  • ভুয়া এজেন্সি বা দালালের ফাঁদে পড়লে ভিসা জাল হতে পারে।
  • ভিসার শর্ত ভালোভাবে পড়তে হবে, যেমন কাজের ধরন, বেতন, সময়কাল ইত্যাদি।
  • অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে আগে যাচাই করতে হবে।

উপসংহার

মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য বৈধভাবে বিদেশে কাজের অন্যতম সহজ মাধ্যম। তবে এ ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। নির্ভরযোগ্য এজেন্সির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলে ঝুঁকি কমে যায়। যারা বিদেশে গিয়ে পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে চান, তাদের জন্য কলিং ভিসা হতে পারে একটি নিরাপদ সুযোগ।

Post a Comment

Previous Post Next Post