মিষ্টি কুমড়া বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। এটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করলে কৃষকরা অল্প সময়ে বেশি ফলন পেতে পারেন। সঠিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে লাভজনকভাবে মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন সম্ভব। চলুন জেনে নেই হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি, জাত, সার ব্যবস্থাপনা ও সময়কাল সম্পর্কে বিস্তারিত।
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়ার জনপ্রিয় জাত
বাজারে বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়। কিছু জনপ্রিয় জাত হলো:
- বারি মিষ্টি কুমড়া-১ ও ২ – উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী।
- বীজবিহীন মিষ্টি কুমড়া – বীজ কম থাকে ও খেতে সুস্বাদু।
- জাপানি ও চায়না হাইব্রিড জাত – দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও বড় আকারের হয়।
- BARI Hybrid Pumpkin-3 – উন্নত মানের ও টিকসই ফলন দেয়।
মিষ্টি কুমড়া চাষের সময়
বাংলাদেশে সাধারণত দুটি মৌসুমে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা হয়:
- রবি মৌসুম (শীতকাল): অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বীজ বপন করা হয়, ফলন পাওয়া যায় মার্চ থেকে মে মাসে।
- খরিফ মৌসুম (গ্রীষ্মকাল): ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বীজ বপন করা হয়, ফলন আসে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে।
চাষ পদ্ধতি
১. মাটির প্রস্তুতি: দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযুক্ত। জমি চাষ করে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
2. বীজ বপন: হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়ার বীজ সারিবদ্ধভাবে ১.৫-২ মিটার দূরত্বে বপন করতে হবে।
3. সেচ ব্যবস্থা: শুকনো মৌসুমে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
4. গাছের যত্ন: লতানো গাছ হওয়ায় মাচা তৈরি করে দিলে ফল ভালো হয়।
মিষ্টি কুমড়া চাষে সার ব্যবস্থাপনা
উচ্চ ফলন নিশ্চিত করতে সঠিক সার প্রয়োগ করতে হবে:
- জৈব সার: ৮-১০ টন গোবর সার প্রতি একরে ব্যবহার করা উচিত।
- রাসায়নিক সার:
- ইউরিয়া – ৮০-১০০ কেজি
- টিএসপি – ৫০-৭০ কেজি
- এমওপি – ৫০-৭০ কেজি
- সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
- জমি তৈরির সময় অর্ধেক টিএসপি ও এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
- বাকি সার চারা লাগানোর ২০-২৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
রোগ ও পোকামাকড় দমন
- ডাউনি মিলডিউ ও পাউডারি মিলডিউ রোগ রোধে কার্বেন্ডাজিম বা ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যায়।
- লাল পোকা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা ভালো।
ফল সংগ্রহ
মিষ্টি কুমড়া পরিপক্ক হলে ফলের গায়ের রঙ গাঢ় হয় ও কান্ড শক্ত হয়। বীজ বপনের ৮০-১০০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়।
উপসংহার
সঠিক জাত নির্বাচন ও আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ করলে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। নিয়মিত পরিচর্যা ও সঠিক সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নত মানের ফলন পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন : উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি কুমড়ার জাত ‘সুইটি’ – চাষের পদ্ধতি ও উপকারিতা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন