বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান, যার নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিশাল সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। প্রতিবছর দেশি ও বিদেশি অসংখ্য পর্যটক কক্সবাজারে আসেন তাদের ছুটি কাটাতে। এই শহরটি দেশের একাধিক অঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগের মাধ্যমে সংযুক্ত, যা বিশেষ করে ঢাকাবাসীদের জন্য একটি জনপ্রিয় ভ্রমণ মাধ্যম।

ট্রেন লাইন

২০২৫ সালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনের মাধ্যমে ভ্রমণ একটি সহজ ও আরামদায়ক অপশন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ট্রেন ভ্রমণের সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে সাশ্রয়ী ভাড়া, আরামদায়ক পরিবেশ, এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের উপভোগের সুযোগ। এছাড়া, সড়কপথের তুলনায় ট্রেন ভ্রমণ অনেক নিরাপদ এবং সময়মত পৌঁছানোর সুযোগ প্রদান করে। 

এই ব্লগে আমরা ২০২৫ সালের ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন ভাড়া, ট্রেনের সময়সূচী, আসনবিন্যাস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো, যা আপনার কক্সবাজার যাত্রাকে আরও সহজ এবং সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনের আসন বিন্যাস ও ভাড়ার তালিকা 

ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে বিভিন্ন শ্রেণির আসনের ব্যবস্থা রয়েছে, যা যাত্রীদের বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়। ২০২৫ সালের আপডেটকৃত ভাড়ার তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

আসন শ্রেণি টিকিট মূল্য (টাকা)
শোভন চেয়ার ৬৯৫ টাকা
স্নিগ্ধা ১,৩২৫ টাকা
এসি সিট ১,৫৯০ টাকা
এসি বার্থ ২,৩৮০ টাকা


৪. টিকিট বুকিং পদ্ধতি

কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য ট্রেনের টিকিট বুকিং করা এখন অনেক সহজ। যাত্রীরা দুইভাবে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন:

(ক) অনলাইন বুকিং

বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং সিস্টেমের মাধ্যমে ঘরে বসেই সহজে টিকিট কেনা যায়।

  • প্রক্রিয়া:
    ১. প্রথমে ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলুন।
    ২. আপনার গন্তব্য এবং ট্রেন নির্বাচন করুন।
    ৩. আসনের ধরন ও সংখ্যা নির্বাচন করুন।
    ৪. অনলাইনে বিকাশ, নগদ, কার্ড বা অন্য যে কোনো মাধ্যমে পেমেন্ট করুন।
    ৫. টিকিট ডাউনলোড করে প্রিন্ট বা ডিজিটাল কপি সংরক্ষণ করুন।

(খ) স্টেশন কাউন্টার থেকে বুকিং

  • সরাসরি নিকটস্থ রেলস্টেশন কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যায়।
  • যাত্রার আগেই টিকিট কেটে নেওয়া ভালো, কারণ পর্যটন মৌসুমে টিকিট দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে।

এভাবে, সহজেই অনলাইন বা স্টেশন কাউন্টারে গিয়ে টিকিট বুক করা সম্ভব। যাত্রার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার টিকিট বুকিং সফল হয়েছে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনের তালিকা

বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালু করেছে, যা পর্যটকদের জন্য সহজ এবং আরামদায়ক যাত্রার সুযোগ করে দিয়েছে। ২০২৫ সালে এই রুটে প্রধানত দুটি ট্রেন চলাচল করছে:

(ক) কক্সবাজার এক্সপ্রেস

  • এটি ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে।
  • আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই ট্রেনটি পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

(খ) পর্যটক এক্সপ্রেস

  • এটি বিশেষভাবে পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে চালু করা হয়েছে।
  • যাত্রীদের জন্য উন্নত মানের সেবা এবং আরামদায়ক আসনবিন্যাস রয়েছে।

২. ট্রেনের সময়সূচী

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ট্রেনের নির্দিষ্ট সময়সূচী রয়েছে, যা পর্যটকদের সুবিধার্থে নির্ধারণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার এক্সপ্রেস

  • ঢাকা থেকে ছাড়বে: রাত ১০:৩০ মিনিট
  • কক্সবাজার পৌঁছাবে: সকাল ৭:২০ মিনিট
  • সাপ্তাহিক বন্ধ: মঙ্গলবার

পর্যটক এক্সপ্রেস

  • ঢাকা থেকে ছাড়বে: সকাল ৬:১৫ মিনিট
  • কক্সবাজার পৌঁছাবে: বিকেল ৩:০০ টা
  • সাপ্তাহিক বন্ধ: রবিবার

এই সময়সূচী অনুসরণ করে যাত্রীরা তাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারবেন। তবে, ট্রেনের সময়সূচীতে যেকোনো পরিবর্তন হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আপডেট জেনে নেওয়া উচিত।

ট্রেন ভ্রমণের সুবিধা

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ট্রেন ভ্রমণ অনেকের কাছেই একটি জনপ্রিয় ও সুবিধাজনক মাধ্যম। এর কয়েকটি প্রধান সুবিধা নিম্নে তুলে ধরা হলো—

(ক) আরামদায়ক ও নিরাপদ যাত্রা

  • ট্রেনের ভেতরে প্রশস্ত আসন ও পর্যাপ্ত লেগস্পেস থাকায় দীর্ঘ ভ্রমণেও ক্লান্তি কম লাগে।
  • ঝাঁকুনিবিহীন সফর হওয়ায় বয়স্ক ও শিশুদের জন্য ট্রেন ভ্রমণ আরামদায়ক।
  • অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় ট্রেন দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম।

(খ) সাশ্রয়ী ভাড়া

  • বিমান বা বিলাসবহুল বাসের তুলনায় ট্রেনের ভাড়া তুলনামূলক কম, তাই বাজেট-বান্ধব ভ্রমণের জন্য আদর্শ।
  • শোভন চেয়ার থেকে শুরু করে এসি বার্থ পর্যন্ত বিভিন্ন মানের আসন পাওয়া যায়, যা যাত্রীর বাজেট অনুযায়ী নির্বাচন করা যায়।

(গ) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ

  • ট্রেন জানালা দিয়ে বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রকৃতি, গ্রামাঞ্চল, নদী ও পাহাড়ি এলাকা দেখা যায়।
  • দীর্ঘ পথের একঘেয়েমি দূর করতে ট্রেন ভ্রমণ বেশ মনোরম অনুভূতি এনে দেয়।

(ঘ) অতিরিক্ত লাগেজ নেওয়ার সুবিধা

  • ট্রেনে তুলনামূলক বেশি মালপত্র বহন করা যায়, যা বিমানের তুলনায় সুবিধাজনক।
  • ব্যাগেজ ফি গাড়ি বা বিমানের তুলনায় অনেক কম।

এছাড়া, যারা পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য ট্রেন একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে।

যাত্রার আগে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

কক্সবাজার ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক ও ঝামেলামুক্ত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত।

(ক) আগেভাগে টিকিট বুক করুন

  • কক্সবাজার একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হওয়ায় ট্রেনের টিকিট দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
  • অনলাইনে বা রেলস্টেশন থেকে অন্তত ১০-১৫ দিন আগে টিকিট কেটে রাখা ভালো।

(খ) সময়মতো স্টেশনে পৌঁছান

  • ট্রেন ছাড়ার অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট আগে স্টেশনে পৌঁছানো উচিত।
  • প্ল্যাটফর্মের অবস্থান ও ট্রেনের সঠিক তথ্য জেনে নিন, যাতে কোনো বিভ্রান্তি না হয়।

(গ) প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখুন

  • দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য হালকা খাবার, পানি, ওষুধ, পাওয়ার ব্যাংক ও কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।
  • মোবাইলে টিকিটের ডিজিটাল কপি বা প্রিন্টেড কপি সংরক্ষণ করুন।

(ঘ) নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন

  • ট্রেনে ভ্রমণের সময় মূল্যবান জিনিসপত্রের প্রতি সতর্ক থাকুন।
  • অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া খাবার গ্রহণ না করাই ভালো।

(ঙ) আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিন

  • বিশেষত বর্ষাকালে কক্সবাজার ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে পরিকল্পনা করুন।

এই ছোটখাটো বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখলে আপনার ট্রেন ভ্রমণ আরও সুন্দর ও উপভোগ্য হবে। 

  কক্সবাজার পৌঁছানোর পর করণীয়

কক্সবাজার পৌঁছানোর পর ট্রেনস্টেশন থেকে হোটেল বা গন্তব্যে যাওয়া, খাবার, ঘোরার জায়গা ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে পরিকল্পনা করা উচিত।

(ক) স্টেশন থেকে হোটেলে যাতায়াত

  • কক্সবাজার রেলস্টেশন থেকে সমুদ্রসৈকত বা হোটেল এলাকায় যাওয়ার জন্য সিএনজি, রেন্ট-এ-কার, ট্যাক্সি ও বাস সহজলভ্য।
  • হোটেল বুকিং আগে থেকে করলে অনেক সময় পিক-আপ সার্ভিস পাওয়া যায়।

(খ) হোটেল বুকিং ও থাকার ব্যবস্থা

  • কক্সবাজারে বিভিন্ন বাজেটের হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে।
  • অনলাইন বুকিং (Agoda, Booking, GoZayaan, Shohoz) করে রাখলে ভালো মানের হোটেল সহজেই পাওয়া যায়।
  • সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি থাকতে চাইলে কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী বা ইনানী এলাকায় হোটেল নেওয়া সুবিধাজনক।

(গ) খাবার ও রেস্টুরেন্ট

  • কক্সবাজারে সামুদ্রিক খাবার (সী ফুড) বেশ জনপ্রিয়।
  • জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টের মধ্যে প্যানোয়া, রয়েল টিউলিপ, নিলা ভিলা, ঝাউবন, ও কক্স সি ফুড উল্লেখযোগ্য।
  • ব্যতিক্রমী খাবারের জন্য বাঙালি খাবার রেস্টুরেন্ট ও কফি শপগুলোতে যাওয়া যেতে পারে।

(ঘ) দর্শনীয় স্থান ঘোরার পরিকল্পনা

কক্সবাজার শুধু বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের জন্যই নয়, আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোর জন্যও বিখ্যাত। কিছু জনপ্রিয় জায়গা:

  • হিমছড়ি ও ইনানী সৈকত – পাহাড় ও সমুদ্রের মিশ্রণে অসাধারণ দৃশ্য।
  • মহেশখালী দ্বীপ – বৌদ্ধ মন্দির ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
  • সেন্টমার্টিন দ্বীপ – দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা কক্সবাজার থেকে জাহাজে গিয়ে দেখা যায়।
  • রামু বৌদ্ধবিহার – বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও প্রাচীন স্থাপত্য দেখতে চাইলে আদর্শ স্থান।

কক্সবাজারে নেমেই যাত্রার পরিকল্পনা ভালোভাবে করলে পুরো ভ্রমণ আরও উপভোগ্য হবে।

কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার ট্রেন ও টিকিট তথ্য

ভ্রমণ শেষে ঢাকায় ফেরার জন্য ট্রেনের সময়সূচী ও টিকিট বুকিং সম্পর্কেও জানা জরুরি। ২০২৫ সালে কক্সবাজার থেকে ঢাকার জন্য দুটি প্রধান ট্রেন চলাচল করছে।

(ক) কক্সবাজার এক্সপ্রেস

  • কক্সবাজার থেকে ছাড়বে: সকাল ৮:৩০ মিনিট
  • ঢাকায় পৌঁছাবে: বিকেল ৫:১৫ মিনিট
  • সাপ্তাহিক বন্ধ: মঙ্গলবার

(খ) পর্যটক এক্সপ্রেস

  • কক্সবাজার থেকে ছাড়বে: রাত ১০:৪৫ মিনিট
  • ঢাকায় পৌঁছাবে: সকাল ৭:৩০ মিনিট
  • সাপ্তাহিক বন্ধ: রবিবার

ফেরার জন্য টিকিট বুকিং পরামর্শ

  • কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার টিকিট আগেভাগে কাটা ভালো, বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে।
  • অনলাইনে টিকিট বুকিং করুন (বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে)।
  • স্টেশন কাউন্টার থেকেও টিকিট সংগ্রহ করা যায়, তবে ভিড় বেশি থাকলে সময়মতো পাওয়া নাও যেতে পারে।

সমাপ্তি: স্মরণীয় ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন যাত্রা ২০২৫ সালে আরও আরামদায়ক ও সুবিধাজনক হয়েছে। এটি সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের সুযোগ দেয়। সঠিক পরিকল্পনা ও আগেভাগে টিকিট বুকিং করলে ভ্রমণ আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।

আপনি যদি কক্সবাজার ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তাহলে ট্রেন যাত্রার এই গাইড আপনার জন্য সহায়ক হবে। নিরাপদে থাকুন, উপভোগ করুন বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পর্যটন গন্তব্য!

আরও পড়ুন : একটি বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ লাভজনক ও নিরাপদ পথ

Post a Comment

Previous Post Next Post