হিন্দু ধর্মে দেবী কালীকে সর্বশক্তিময়ী দেবী হিসেবে পূজা করা হয়। তিনি শুধুমাত্র শক্তির প্রতীক নন, বরং তিনি সময়, মৃত্যু এবং ধ্বংসের দেবীও। দেবী কালীকে ঘিরে অসংখ্য পুরাণ এবং কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, দেবী কালী আসলে কোন দেবতা থেকে আবির্ভূত হয়েছেন?
দেবী কালী মূলত দেবী দুর্গার একটি রূপ। পুরাণ মতে, দেবী কালী আবির্ভূত হয়েছিলেন যখন দেবী দুর্গা অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। দেবী দুর্গা যখন অসুর রাজ মহিষাসুরকে পরাজিত করতে ব্যস্ত ছিলেন, তখন অনেক ক্ষুদ্র অসুর সৃষ্টি হচ্ছিল।
এই অসুরদের নিধন করার জন্য দেবী দুর্গা নিজেই কালী রূপ ধারণ করেন। কালী রূপে তিনি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তার রূপের বর্ণনা এমন যে, তিনি কালো রঙের, লম্বা জিহ্বা বের করে আছেন, এবং তার গলায় মানুষের মাথার মালা রয়েছে। এই রূপে তিনি অসুরদের একে একে বিনাশ করেন।
দেবী কালীকে নিয়ে আরেকটি প্রচলিত কাহিনি হল দেবতা বিষ্ণুর সাথে তার সংযোগ। কিছু পুরাণ মতে, দেবী কালী ভগবান বিষ্ণুর শক্তি থেকে সৃষ্ট। বিষ্ণুর মহাশক্তি যখন রাগান্বিত হয়ে ওঠে, তখন কালী রূপে তিনি প্রকাশিত হন। এই রূপে তিনি সকল অপশক্তিকে ধ্বংস করেন এবং পৃথিবীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন।
দেবী কালী এবং শিবের সম্পর্কও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কালীকে মহাদেব শিবের সঙ্গিনী এবং শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি বিখ্যাত কাহিনিতে দেখা যায়, দেবী কালী যখন রুদ্ররূপে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিলেন, তখন শিব তার সামনে শুয়ে পড়েন। শিবের শরীর স্পর্শ করার পর কালী ধীরে ধীরে শান্ত হন। এটি প্রতীকীভাবে দেখায় যে শক্তি এবং ধ্বংস একে অপরের পরিপূরক।
দেবী কালীকে সময় বা কাল হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তার নামের অর্থই হল “কাল বা সময়”। তিনি একাধারে সৃষ্টি, রক্ষণ এবং ধ্বংসের প্রতীক। এটি দেখায় যে জীবনের প্রতিটি ধাপ তার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরও পড়ুনঃ মা কালীর গলায় মুণ্ডমালা কেন? মা কালী কেন মুন্ডমালা পরেন?
সারাংশে, দেবী কালী মূলত দেবী দুর্গার একটি রূপ, তবে তাকে বিষ্ণু এবং শিবের শক্তির সাথেও যুক্ত করা হয়। তার আবির্ভাবের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হল অসুর বা অপশক্তির বিনাশ এবং শৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠা।
দেবী কালী কেবল ধ্বংসের প্রতীক নন, তিনি নতুন সূচনা এবং সৃষ্টির প্রতীকও। তার রূপের মাধ্যমে আমাদের শেখায় যে জীবনের যেকোনো সমস্যাকে অতিক্রম করার জন্য শক্তি এবং সাহসের প্রয়োজন।
আপনি যদি শক্তি, সাহস এবং ধৈর্যের প্রতীক দেবী কালী সম্পর্কে আরও জানতে চান, তবে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পুরাণ এবং শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে পারেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন