বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে রথযাত্রা একটি ঐতিহ্যবাহী এবং ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ন উৎসব। বিশেষ করে পুরী শহরে অনুষ্ঠিত রথযাত্রা সমগ্র বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক অতি শ্রদ্ধেয় অনুষ্ঠান। এই রথযাত্রায় যে তিনটি প্রধান দেবতার রথ থাকে, তাদের নামও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের পিছনে রয়েছে বিশেষ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য।

জগন্নাথ

জগন্নাথ দেবের রথের নাম – কপিধ্বজ

জগন্নাথ দেব, যাঁর অর্থ "বিশ্বের প্রভু", তাঁর রথের নাম হচ্ছে কপিধ্বজ। "কপি" শব্দের অর্থ বানর, আর "ধ্বজ" মানে পতাকা। অতএব, কপিধ্বজের মানে হলো বানরের পতাকা। এই নামের মধ্যে একটি বিশেষ ইতিহাস জড়িত। বলা হয়, যেদিন জগন্নাথ দেব মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তাঁর সাথে এক বানর ছিল। সেই বানর জগন্নাথ দেবের রথের সামনে দাঁড়িয়ে রক্ষা করেছিলেন। সেই কারণেই জগন্নাথ দেবের রথের নামকরণ হয়েছে কপিধ্বজ।

বলদেব দেবীর রথের নাম – হলধ্বজ

বলদেব দেবী, যাঁর আরেক নাম বালভদ্র, তাঁর রথের নাম হলধ্বজ। "হলধ্বজ" শব্দটি "হল" এবং "ধ্বজ" থেকে এসেছে, যেখানে "হল" হচ্ছে গরুর ফল বা শক্তি এবং "ধ্বজ" হচ্ছে পতাকা। এটা বোঝায় বলদেব দেবীর রথের মধ্যে গরুর ফলের প্রতীকী উপস্থিতি। বলদেব দেবী ছিলেন জগন্নাথ দেবের ভাই এবং তাঁর শক্তির প্রতীক হিসেবে এই নামকরণ করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, বলদেব দেবী তাঁর রথে মহাশক্তির অধিকারী এবং রথের চালনার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রদান করেন।

সুভাদ্রা দেবীর রথের নাম – পদ্মধ্বজ

সুভাদ্রা দেবী, যিনি জগন্নাথ দেব এবং বলদেব দেবীর বোন, তাঁর রথের নাম পদ্মধ্বজ। "পদ্ম" মানে পদ্মফুল এবং "ধ্বজ" মানে পতাকা। পদ্মধ্বজের অর্থ হলো পদ্মফুলের পতাকা। পদ্মফুল হিন্দু ধর্মে একটি পবিত্র এবং শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে পরিচিত, যা শ্রীবিষ্ণু, লক্ষ্মী এবং অন্যান্য দেবদেবীদের সঙ্গে সম্পর্কিত। সুভাদ্রা দেবীর রথের নাম পদ্মধ্বজ দিয়ে তাঁর শুদ্ধতা, পবিত্রতা এবং শাশ্বত শক্তির প্রকাশ পায়।

রথের নামের তাৎপর্য

এই তিনটি রথের নাম শুধুমাত্র একটি বাহন হিসেবে নয়, বরং দেবতাদের শক্তি, চরিত্র এবং ধর্মীয় মহিমার প্রতীক। রথের যাত্রা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক ধরনের আধ্যাত্মিক যাত্রা, যেখানে তারা দেবতার আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশ্যে রথের পিছু পিছু চলে। এটি একদিকে যেমন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা, তেমনি এটি দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক।

রথযাত্রার দিনগুলোতে, যখন এই তিনটি রথ শহর বা গ্রামগুলোতে চলতে থাকে, তখন হাজার হাজার ভক্ত তাঁদের বিশ্বাস এবং আশা নিয়ে রথের সঙ্গে যুক্ত হন। এই রথযাত্রার মাধ্যমে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অনুভব করেন এক বিশেষ ধরনের সংযোগ দেবতার সঙ্গে, যা তাদের জীবনকে আরও আধ্যাত্মিক ও শক্তিশালী করে তোলে।

সুতরাং, এই তিনটি রথের নামের মধ্যে রয়েছে গভীর ধর্মীয় তাৎপর্য এবং তা প্রকাশ পায় তাদের পেছনের কিংবদন্তি, বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক মূল্যের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন : জগন্নাথ দেবের প্রিয় ফুল: পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন