অহংকার মানব জীবনের একটি সাধারণ প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তি কখনও কখনও আমাদের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ গীতা আমাদের অহংকারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত করে। গীতার এই মহৎ শিক্ষাগুলি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

অহংকার

গীতার আলোকে অহংকারের প্রকৃত স্বরূপ

অহংকার আমাদের মন ও মনের কার্যক্ষমতা দখল করে। এটি আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ ও মানুষের প্রতি সঠিক আচরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অহংকার আমাদের বিবেককে নষ্ট করে এবং আমরা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্ররোচিত হই। যখন আমরা নিজেকে সবার উপরে মনে করি, তখন আমরা অন্যদের সম্মান করতে ভুলে যাই এবং এর ফলে সমাজে আমাদের অবস্থান খারাপ হয়ে যায়।

গীতায় অহংকারের কথা

গীতা আমাদের অহংকারের প্রকৃত প্রকৃতি সম্পর্কে সতর্ক করে। মহাভারতের যুদ্ধে, শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শিক্ষা দেন যে অহংকার এবং আত্ম-গরিমা আমাদের সর্বনাশের দিকে নিয়ে যেতে পারে। গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের ২৭তম শ্লোকে বলা হয়েছে,

"প্রকৃতে: ক্রিয়মানানি গুণৈ: কর্মাণি সর্বশ:। অহঙ্কারবিমূঢাত্মা কর্তাহমিতি মন্যতে।।"

অর্থাৎ, প্রকৃতির গুণাবলী অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্ন হয়; কিন্তু অহংকারবিমূঢ় ব্যক্তি নিজেকে কর্তা মনে করে।

অহংকারের ক্ষতিকর প্রভাব

অহংকার মানুষের আত্মা এবং মানসিকতাকে কুরে কুরে খায়। এটি আমাদের নৈতিকতা এবং ন্যায়বিচারের ধারণাকে ধ্বংস করে। অহংকারের কারণে আমরা নিজের এবং অন্যের সঠিক মূল্যায়ন করতে অক্ষম হই। এতে পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। মানুষ একা হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবনে সাফল্য অর্জন করাও কঠিন হয়ে যায়।

অহংকার ত্যাগ করার উপায়

গীতা আমাদের অহংকার ত্যাগ করার বিভিন্ন উপায় শেখায়। প্রথমত, আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতাকে স্বীকার করতে হবে। আমরা যখন নিজেদের দুর্বলতা উপলব্ধি করতে পারি, তখন আমাদের মধ্যে অহংকার জন্ম নেয় না। দ্বিতীয়ত, আমাদেরকে অহংকারহীন ভাবে কাজ করতে হবে। সব কাজ সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে করতে হবে। তৃতীয়ত, আমাদেরকে নম্রতা ও বিনয়তা চর্চা করতে হবে। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তাদের মতামতকে মূল্য দেওয়া আমাদের অহংকারহীন করতে সাহায্য করবে।

অহংকারহীন জীবন: শান্তি ও সফলতার চাবিকাঠি

গীতা আমাদের অহংকারহীন জীবনযাপনের জন্য নির্দেশনা দেয়। অহংকারহীন জীবনযাপন আমাদের মানসিক শান্তি এবং আত্মতুষ্টি প্রদান করে। এটি আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং আমরা জীবনে প্রকৃত সফলতা অর্জন করতে পারি। অহংকারহীন মানুষ সবসময় অন্যদের সাহায্য করে এবং সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

উপসংহার

অহংকার মানব জীবনের একটি বিষাক্ত স্বভাব যা আমাদের মানসিকতা ও সমাজের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। গীতা আমাদের অহংকারের প্রকৃতি ও তার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। গীতার বাণী আমাদের অহংকার ত্যাগ করে নম্রতা ও বিনয়তা চর্চা করতে অনুপ্রাণিত করে। অহংকারহীন জীবনযাপন আমাদের মানসিক শান্তি ও প্রকৃত সফলতা প্রদান করে।

গীতার শিক্ষাগুলি অনুসরণ করে আমরা আমাদের জীবনে সঠিক পথ খুঁজে পেতে পারি এবং অহংকারমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারি। অহংকারহীন জীবনযাপন আমাদের ব্যক্তিগত উন্নতি ও সমাজের কল্যাণে সহায়ক হবে। তাই আসুন, আমরা সবাই গীতার বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করি এবং অহংকারমুক্ত জীবনযাপন করার চেষ্টা করি।

Post a Comment

Previous Post Next Post